অনলাইনে ট্রেনের টিকেট বুক করতে হয় কিভাবে?


প্রযুক্তির এই চরম সময়েও আমরা যদি ৫০৳ রিক্সা ভাড়া দিয়ে স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে টিকেট বুক করি তাহলে আমরা কোন দিক থেকে উন্নত হলাম? যেখানে ঘরে বসে শুধুই কয়টা ক্লিক করে কোনো সময় অপচয় ছাড়াই টিকেট বুক করা যায় সেখানে স্টেশনে গিয়ে লাইনে দাড়ানোর কি কোনো মানে হয়? নিশ্চই কোনো মানে হয় না। তো আমি অনেক দিন থেকেই কিভাবে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট বুক করতে হয় সে বিষয়ে আর্টিকেল লিখতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু কোনো টিকেট কাটার প্রয়োজন না হওয়ায় সবগুলো প্রসেস স্কিনশট সহ দেখানো সম্ভব না হওয়ার কারণে কোনো আর্টিকেল লিখতে পারি নাই। তবে আজ হটাৎ করে টিকেট এর দরকার হওয়ায় অনলাইনে টিকেট কেটে ফেললাম এবং সকল প্রসেস এর স্কিনশট নিয়ে নিলাম। তাহলে আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট বুক করতে হয়।


বিঃদ্রঃ স্ক্রিনশট গুলোতে আমি আমার টিকেটের জার্নির তারিখ গুলো ঢেকে দিয়েছি, কারণ আমি চাই না কেউ জানুক আমি কখন কোথায় কোন গাড়িতে যাচ্ছি।


অফিসিয়াল অ্যাপ ডাউনলোড করুন

প্রথমে আপনার বাংলাদেশ রেল সেবার অফিসিয়াল অ্যাপ এর প্রয়োজন হবে। তো এই লিঙ্ক থেকে প্লে স্টোরে গিয়ে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন।


একাউন্ট রেজিস্টার করুন

অ্যাপ ডাউনলোড করার পর আপনার কাজ হলো বাংলাদেশ রেল সেবার একাউন্ট তৈরি করা। রেজিস্টার করার জন্য রেল সেবা অ্যাপ ওপেন করে সাইন আপ ট্যাবে গিয়ে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন দিয়ে রেজিস্টার ফরম সঠিক ভাবে পূরণ করে সাইন আপ বাটনে ক্লিক করুন। সকল ইনফরমেশন ঠিকঠাক থাকলে সাইন আপ হয়ে যাবে।


একাউন্ট ভেরিফাই করুন

টিকেট কেনার আগে অবশ্যই আপনার এনআইডি নম্বর অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে একাউন্ট ভেরিফাই করতে হবে অন্যথায় আপনি টিকেট কিনতে পারবেন না। তো একাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য অবশ্যই আপনাকে লগইন করতে হবে। লগইন করার জন্য লগইন ট্যাবে গিয়ে লগইন ইনফরমেশন দিয়ে লগইন করুন(প্রথম বার লগইন এর সময় এসএমএস এর মাধ্যমে ফোন নাম্বার ফেরিফাই করতে বলবে)।


এবার একাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য অ্যাপ হোমপেজ থেকে মেনু ওপেন করে সেটিংস অপশন এ ক্লিক করুন।


এবার সেটিংস পেজ ওপেন হলে সেখান থেকে আপডেট প্রোফাইল অপশন সিলেক্ট করুন।


এবার প্রোফাইল আপডেট এর জন্য প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন দিয়ে সাবমিট করুন, মনে রাখবেন ইনফরমেশন গুলো আপনার এনআইডি অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ড(যেটা দিয়ে আপনি ভেরিফাই করতে চান) অনুসারে হতে হবে। 


  • Name এর জায়গায় আপনার পুরো নাম ইংরাজিতে লিখুন।
  • Date of Birth এর জায়গায় জন্ম তারিখ লিখুন।
  • Gender এর জায়গায় জেন্ডার সিলেক্ট করুন।
  • Identification Number এর জায়গা থেকে এনআইডি বার্থ সার্টিফিকেট যেটা দিয়ে আপনি ভেরিফাই করতে চান সেটা সিলেক্ট করুন।
  • NID/Birth Certificate এর জায়গায় আপনার এনআইডি অথবা বার্থ সার্টিফিকেট এর সিরিয়াল নাম্বার লিখুন।

আপনার সাবমিট করা ইনফরমেশন গুলো আপনার এনআইডি অথবা বার্থ সার্টিফিকেট এর ইনফরমেশন গুলোর সাথে সঠিক থাকলে একাউন্ট ভেরিফাই হয়ে যাবে।


টিকেট ক্রয় করুন

একাউন্ট ভেরিফাই করার পর এখন আপনি টিকেট ক্রয় করতে পারেন। টিকেট কেনার জন্য অ্যাপ এর হোমপেজ থেকে Purchase অপশন এ প্রবেশ করুন।


এবার কোন স্টেশন থেকে কোন স্টেশন এ যেতে চান কবে যেতে চান এগুলো সিলেক্ট করে সার্চ ট্রেইন অপশন এ ক্লিক করুন।


  • From Station অপশন এ ক্লিক করে আপনি কোন স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতে চান সেটা সিলেক্ট করুন।
  • To Station অপশন এ ক্লিক করে আপনি কোন স্টেশন পর্যন্ত যেতে চান সেটা সিলেক্ট করুন।
  • Journey Date এ ক্লিক করে আপনি কবে ভ্রমণ করতে চান সেটা সিলেক্ট করুন।


এবার আপনি যে স্টেশন এবং তারিখ সিলেক্ট করেছিলেন সেই অনুযায়ী যেসব ট্রেন এর শিডিউল আছে সেগুলো এবং তাদের সিডিউল এর সময় দেখাবে। এখান থেকে আপনি যে ট্রেনে জার্নি করতে চান সেটাতে কতজন এর টিকেট কিনতে চান, কোন ধরনের আসনের টিকেট কিনতে চান সেগুলো সিলেক্ট করে Select Seat অপশনে ক্লিক করুন।


এবার আপনার সিলেক্ট করা ট্রেনে কোন কোন বগিতে সিট খালি আছে সেটা দেখাবে। এখান থেকে আপনার পছন্দ মত একটি বগি সিলেক্ট করুন।


এবার আপনার সিলেক্ট করা বগির ভিতরের স্ট্রাকচার দেখাবে। এখানে সবুজ চিহ্নিত সিটগুলো আভেলেভল আছে। তো এখান থেকে আপনার পছন্দ মতো সিট সিলেক্ট করুন। আপনার সিলেক্ট করা সিট টি গারো সবুজ কালারে হাইলাইট হবে। সিট সিলেক্ট করা হলে নিচের দিকে স্ক্রল করে Continue বাটনে ক্লিক করুন।


এবার আপনার সিলেক্ট করা সিটের ডিটেইলস সিট সংখ্যা এগুলো দেখাবে। এবার টিকেটের দাম পেমেন্ট করার জন্য আপনার বয়স এবং জেন্ডার সিলেক্ট করে PAY NOW বাটনে ক্লিক করুন।


এবার আপনাকে বাংলাদেশ রেলওয়ের নীতিমালা গুলো দেখানো হবে, আপনি চাইলে নীতিমালা গুলো পড়ে দেখতে পারেন। নীতিমালা গুলোর সাথে একমত হতে I Agree বাটনে ক্লিক করুন।


এবার আপনি কোন মাধ্যমে পেমেন্ট করতে চান সেটা সিলেক্ট করুন। আমার কাছে বিকাশ আছে তাই আমি বিকাশ সিলেক্ট করবো।


এবার আপনার বিকাশ মোবাইল নম্বর ইনপুট করে CONFIRM বাটনে ক্লিক করুন।


এবার আপনার বিকাশ নম্বরে পাঠানো ভেরিফিকেশন কোড দিয়ে পেমেন্ট ভেরিফাই করুন।


পেমেন্ট সঠিক ভাবে হয়ে গেলে নিচের মতো একটি মেসেজ দেখাবে। এর পর ত্রিশ মিনিটের মধ্যে আপনার টিকেট রেল কর্মকর্তা দ্বারা ভেরিফাই করা হবে।


টিকেট সংগ্রহ করুন

ভেরিফাই করার পর আপনাকে আপনার টিকেট আপনার একাউন্ট ইমেইলে মেইল করে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এছাড়া আপনি অ্যাপ এর হোমপেজ থেকে হিস্টোরি অপশনে প্রবেশ করে আপকামিং টিকেট এর লিস্ট এ আপনার টিকেট দেখতে পাবেন।


অ্যাপ থেকে টিকেট সংগ্রহ করুন

অ্যাপ থেকে টিকেট সংগ্রহ করার জন্য পেমেন্ট করার ত্রিশ মিনিট পর অ্যাপ এর হোমপেজ থেকে হিস্টোরি অপশনে প্রবেশ করুন।


হিস্টোরি পেজে আপকামিং ট্যাবে আপনার টিকেট দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনার টিকেট এর উপর ক্লিক করুন।


এবার আপনার টিকেট এর সকল ডিটেইলস দেখাবে এবং পাশে একটি ডাউনলোড আইকন দেখতে পাবেন। জাস্ট ডাউনলোড আইকন এ ক্লিক করে টিকেট ডাউনলোড করে নিন।


ইমেইল থেকে টিকেট সংগ্রহ করুন

পেমেন্ট কমপ্লিট করার ত্রিশ মিনিট পর আপনার মেইল ওপেন করে দেখুন বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে একটি মেইল আসবে সেটা ওপেন করুন।


আপনার টিকের টি পিডিএফ ফাইল হিসেবে থাকবে। টিকেট টি ডাউনলোড করার জন্য ডাউনলোড আইকন এ ক্লিক করুন। এখন আপনি চাইলে আপনার ডাউনলোড করা টিকেট প্রিন্ট করে নিতে পারেন অথবা আপনার ফোনে নিয়েই জার্নি করতে পারেন। পরবর্তীতে ট্রেনের মধ্যে টিকেট দেখতে চাইলে আপনার ফোন থেকে দেখলেই চলবে।


কিভাবে টিকেট ভেরিফাই করা হয়

অনেকেই হয়তো ভেবে নিয়েছেন যে যেহেতু টিকেট ডিজিটালাইজ তাই আপনি পিডিএফ এডিট করে টিকেট জাল করলে টিকেট চেকার ধরতে পারবে না, কিন্তু আপনি সম্পূর্ণ রূপেই ভুল। আপনি টিকেট এর মধ্যে দেখবেন সেখানে আপনার ফোন নম্বর এবং একটি পিন আছে। রেল সেবার অ্যাপে মেনু থেকে ভেরিফাই টিকেট অপশনে প্রবেশ করে আপনার টিকেটের ফোন নাম্বার এবং পিন বসিয়ে সার্চ করলেই আপনার টিকেট সঠিক কি না সেটা জানা যাবে। তাই যারা টিকেট জাল করার কথা ভাবছেন তাদের বলে রাখি কোনো ভাবেও এমন কাজ করার কথা ভাববেনও না। জাল টিকেট নিয়ে ধরা পড়লে আপনার অনেক বড় জরিমানা এমনকি জেল পর্যন্ত হতে পারে। সুতরাং আগে থেকেই সাবধান থাকুন।


ট্রেনে জার্নি করার সময় অবশ্যই সাবধানে জার্নি করবেন। আর ট্রেনের মধ্যে ঘুমানোর সময় একটু বেশীই সাবধানে থাকবেন, হ্যাপি জার্নি।